এই তো আমার সাবেক কালের ঘর
যেখানে ঘর, কান পাতলেই সেখানে বন্দর।
সব জ্বর একদিন না একদিন ছেড়ে যায়। সেবার যখন জ্বর হয়েছিলো, আর সকলের মতো আমিও ভেবেছিলাম সারবে না কোনোদিন। এই শেষ। এইবার একটা এসপার- ওসপার না হয়ে যাচ্ছেনা। ভয়ে ভয়ে আছি আর কোথা থেকে একটা চোরা আনন্দ এসে সব গোলমাল করে দিচ্ছে। মাঝে মাঝেই মাপছি- ও বাবা এতো! আমার কপালে এত জ্বরও থাকতে পারে! কিছুই রুচছে না মুখে আর সবার সাথে কথায় কথায় ঝগড়া হয়ে যাচ্ছে। উত্তাল ঝগড়া করছি আর ভাবছি এটা কি বিকার? এরকম কেন হচ্ছে আমার! এরকম সবার হয় নাকি?
চুপি চুপি খোঁজ নিতে লাগলাম। জোর রক্ত পরীক্ষা টরিক্ষা। সিম্পটম মিলে যেতে যেতে শেষে দারুণ বাড়াবাড়ি হলো। ভয়, ভাবনা কিছুই তেমন নেই আর। ও যে কেড়ে আমায় নিয়ে যায় রে।
নিজের নাড়ী ধরে বসে আছি, সবকিছুর মধ্যে এই এক জ্বালা হয়েছে। কাজকর্ম বন্ধ হওয়ার জোগাড়। জ্বরের সঙ্গেই তখন আমার একমাত্র যোগাযোগ। এই সময় একদিন কিছু কিছু স্বর আমায় ছেড়ে চলে গেলো কৈশোরের সরলতার মতো। নাকি আমি ছেড়ে এলাম তাদের? ঠিক বুঝতে পারলাম না। সেই সব কোমল স্বরের জন্য দুঃখ হলো। পাহাড়-অরণ্যের কিছু স্বপ্নও গেলো ছেড়ে। কচি লাউয়ের মতো সবুজ স্বপ্ন, ফায়ারপ্লেস আগুনের মতো গনগনে।
সারা দুপুর পায়রাদের ওড়াউড়ি দেখি পাশের বাড়ির কার্নিশে। দেখি কথা চিনতে পারিনা কারো। শব্দগুলো ভোঁতা ভোঁতা হয়ে কানে ঢোকে, কোন ছবি হয়না। কেমন যেন একা হয়ে গেলাম।
তাও আমি কাটাচ্ছিলাম বালিশে ঠেস দিয়ে, জ্বরের পাণ্ডুলিপি পড়ে পড়ে।
তারপর একদিন ঘাম দিয়ে ছাড়ার মতো হল। জ্বরের অভ্যাস ছিলনা, আবার ভয় পেলাম। এক পা এক পা করে এগোচ্ছি আর খারাপ লাগছে। অপরাধী লাগছে। নির্বোধ। এই জ্বর তবে শাশ্বত ছিলনা? এইভাবে জ্বর সেরে যায়? এত উত্তাপ মিথ্যা ছিল তবে! অবিশ্বাস্য লাগছিলো।
কাঠ-কয়লা দিয়ে হিজিবিজি লিখি, মুছেও ফেলি তাড়াতাড়ি। তারপর দেখতে দেখতে সব তপ্ত পোশাকের রঙ ফিকে হয়ে এলো। পাণ্ডুলিপি থেকে শুকিয়ে এলো বর্ষার জল। দেখতে দেখতে পুরোনো হলো সব গভীর সৌন্দর্যময় শীলালিপি। সব আশ্লেষ, মনোযোগ।
ধুলো পড়ে এলো শোকে, রেডিওতে। সেই সব গান আর বাজেনা কোথাও। অবাক ও বিষণ্ণ চোখে পৃথিবীর দিকে তাকালাম আবার। কপালে হাত দিয়ে দেখি- ঠাণ্ডা মতন লাগে। তারপর জ্বর সেরে গেলো আর সেটা বিশ্বাসও হলো আমার। শুধু কতগুলো ঘোর লাগা দিন আর রাত্রি বাঁধা পড়ে আছে জ্বরের কাছে, কোথায় যেন।
2 comments:
ki maratmak bhalo likhechhis!!
বোকা বুদ্ধুরাম ভাবে প্রেমের গল্প! সত্যি?
Post a Comment