আজ সকাল সকাল ইমনকে মনে পড়লো। সন্ধ্যার পবিত্রতম কিছু রঙ বুকে নিয়ে যে অস্তরাগরঞ্জিতা অপেক্ষা করে থাকে সূর্য ডুবে যাওয়ার, চন্দনগন্ধি সেই কিশোরীর নাম ইমন। ওর জন্য একটি তার পঞ্চমে, আরেকটি নিষাদে রেখে বাঁধা হয় তানপুরো। জোয়ারী করে তোলা হয় সাঁঝের গাঙ, যার ওপর সে অনায়াসে ভাসাতে পারে তার পালকের মতো ফুরফুরে, মুক্তোর মতো নিটোল আসমানী ময়ূরপঙ্খী।
সন্ধ্যা নেমে আসে। পুব-আকাশে মেঘ সরে যায়, হঠাত করে একফালি চাঁদ দেখতে পেয়ে খুশী হয় কিশোরী। দুচোখে তার কড়ি মধ্যমের বিস্ময় ফুটে ওঠে। ময়ূরপঙ্খীর খোলা ছাদে জাফরি কাটা আলসের ওপর ঝুঁকে পড়ে সে। আর কতো দেরী? কখন আসবে তার প্রীতম? আকাশে তারা ফুটতে শুরু করেছে যে! তবে কি আজ দেরী হবে? হাওয়ায় উড়তে থাকে তার রেশমের মতো সুরেলা আঁচল। জ্যোতস্নায় ধুয়ে যায় তার গা। মনে মনে একান্তভাবে গান্ধারকে ডাকে সে। এসো গহীন, এসো।
অরণ্যের মধ্যে, স্ফটিকের আসনে বসে মালায় প্রহর গাঁথে হেমবরণ, পলাশলোচন শুদ্ধ গান্ধার। অনন্ত প্রেমরসে বিভোর হয়ে থাকে মধ্যরাতের মতো গহীন সেই পুরুষ। গন্ধর্বলোকে তার কাছে পৌঁছয় ইমনের ডাক।
একসময় কিশোরীর বন্ধ চোখের ওপর ভাসতে থাকে শুদ্ধ গান্ধারের ছায়া। ইমনের কাঁপতে থাকা অধরে সে বীণকারের অমোঘ আঙুল রাখে।
ইমনসকাশে গান্ধারকে যেমন করে দেখতে পাওয়া যায়, এমন আর কোথাও পাওয়া যায় না। এই তীব্র সকালে কেন মনে পড়লো আজ তাদের কথা? আমার রৌদ্রস্নাত, তরতরে ঝরঝরে সকালগুলোও কি আসলে নিবিড় কোনো সন্ধ্যার জন্যই অপেক্ষা করে থাকে?
হয়তো তাই। এক মায়া-অন্ধকারে মিশে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে আমাদের অবচেতন। অজান্তে সাধনা করে সেই সময়ের জন্য, যখন কিশোরী ইমনকে বিস্তৃতি দেবে নিষাদ ছুঁয়ে রেখাবের সুর লাগানো গান্ধার আর গান্ধারকে পরম যত্নে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নেবে কমলকলির মতো ফুটে উঠতে থাকা ইমন।
2 comments:
dhanyo hoye gelam...
thik eTar janyai aaj ami opekkha korchhilam!!
ami bhashaheen...ei lekhar por nistabhdhota chhaRa, tanmoyota chhara ar kichhu thakte nei, thakte parena...
Post a Comment