রাণী আমি, জানোইতো। রাজধানী ছেড়ে,
যাবার উপায় নেই। নইলে হয়ত-
কটাদিন সত্যি সত্যি
জঙ্গলে-উপত্যকায় দুবৃত্তের মত
কাটাতাম তোমার সঙ্গে।
যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা হত, দারুণ লুঠপাট!
ধান-দূর্বা ফেলে দিয়ে,
নীল বসন উড়িয়ে দিতাম ঝড়ে,
মেখে নিতাম
পলাশরঙা ধুলো আর
আমার শিকার করা দেখে তুমি গোপন ঈর্ষায়
পাগল হয়ে যেতে-
ঝলসে নিতাম মাংস
গুহায় আগুন জ্বেলে,
চাখতে চাখতে পুড়িয়ে ফেলতাম ঠোঁট-
(রাজভোগে কখনো অসহ্য
কোন স্বাদ থাকেনা; ওগুলো গুজব।)
তছনছ করা যেত একটা
সাবেকী রুপকথা।
বেশ হোত, বেশ হোত- তাইনা ডাকাত?
'কটাদিন' কেন?
বুঝবে না, রাজ্যপাট নেই তোমার।
বেশীদিন পাশাপাশি- খেলা নয়,
আসল যুদ্ধ হবে। দুলে দুলে উঠবে
পায়ের তলার মাটি।
পরস্পরের রক্ত লাগবে হাতে।
ওসব শিরদাঁড়ার ক্ষত, কোনোদিন সারেনা।
ভয় দেখাচ্ছি?
ভয় পাচ্ছি বলো। ক্ষয়ে যাওয়াকে বড় ভয় হয়।
আবার একটা দম-চাপা যুদ্ধ আর
তারপরের সাতমহলা চুক্তি-
ঐ শান্তির কথা ভাবতে পারিনা।
তাছাড়া, একটা ভুল হচ্ছে
তোমার। আমার রক্তের রঙ নীল, মনে রেখো।
এই রাজ্যের ভালোমন্দও সব আমাকেই দেখতে হয়।
--------------
(সুয়োরাণীর চিঠি)
I thought I might write here...Why? well, I've to think hard... :) I guess a web log is self explanatory... although not quite like my Personal Diary, Its like my little room that has a large window.
Wednesday, January 6, 2010
How do I do?
Recently, I've raved a lot about our trip to Mahabalipuram and Pondicherry in my correspondences. It was wonderful indeed. Now that we're back to Pune, I must try concentrating in things that I must do. Time is, but priceless.
I need to work hard, pretty hard. I feel hungry.
I feel less focused and lack discipline. That's not the way to live this life, perhaps.
They say, "Be more concerned about your character than with your reputation, because character is what you really are while reputation is merely what others think you are."
and, I shouldn't fool myself.
I need to work hard, pretty hard. I feel hungry.
I feel less focused and lack discipline. That's not the way to live this life, perhaps.
They say, "Be more concerned about your character than with your reputation, because character is what you really are while reputation is merely what others think you are."
and, I shouldn't fool myself.
Sob Choritro Kalponik


Hna 'Sob Choritro Kalponik' er Idea ta mondo chhilona... touching, kothao kothao hoyto identify kora jaye.... kintu Execution Ta mosto boRo JHUL.
Prasenjit, Bipasha, Jishu eder keno newa hoy tar uttorta hoyto sohoj, Baajaar ke khushi korte. Kintu prothom proshno Rituporno ki puropuri sei kajTa kortei film toiri koren?
Sekhetre, bhalo ekta Screenplay jole debar dorkar chhilona.
Screen play Ta bhalo chhilo, sombhabona chilo... oboshyoi aro kichu editing aro anek bhabna-chintar dorkar chhilo Bipashar Character take niye, tar dialogue/ monologue gulo niye, tar Swopno gulo niye... In fact sobkoTa character ke niyei eta korar dorkar chilo... boddo kNacha kaaj bole mone hoyeche anek jayegay. MoTa daager kaaj.
tabe, Bipashar Saree gulo darun bhalo chhilo protyekTa.

ar Bipashar character er mukhe Onorgol khoi-foTa angrezi.
Bangla sahityo theke joto dure rakha jaye ar ki... ekjon engineer- arekjon Jamshedpuriya Bong.
Jotota boiporityo toiri kora jaye... chesta korechen porichalok. kintu dNaRalona.
Somporko, somporker shades, joTilota, TanapoRen niye kaaj koraTa emnitei Sohoj kaaj noy...
Swopner somporker songe baastober somporker protidinkaar je songhaat, tar theke uThe ashe je jontrona ebong jeta sudhu facial expression e prokash pabar jinis noy... kichchu temon foTeni kothao sebhabe.
Ekjon manusher bhalobasa (doya-maya-samobedona-empathy r moto bepar noy, Bhalobasa. Prem. ekhane antoto tai bolte cheyeche), se joto antoh-solila i hok na keno, sudhu tar dum kore newa kichu decisions/ kichu hallucinations ar ek khana lukono kobitay prokash pawa ki jothesto convincing? amar kachhe antoto noy.
Eikhane aboshyo porichalok muchki heshe boltei paren "agei to bole diyechi, Sob choritro Kaalponik". Kaar kolpona? amader? apnar? aapnar kolpona-Ta to amader ThikThak vabe bojhate habe!
To, aapni ki cheyechhilen... kalponik choritro... jara ektu ektu convincing habe, anekkhani noy...ei?
aar, oi ekTu ekTu convincing howar beparta'r abhash to dilo apnader Screenplay, Chokher samne seTa holo koi??
Jeta holo seTa hochche- Somoy noshTo.
---------------------------
(anekdin agey dekhechi film ta Salt Lake City Centre-er Inox e. Sei August e. aj keno eto hejalam ke jane :-))
Tuesday, January 5, 2010
Many happy returns
Happy Birthday. May God bless you now and always.
May you have a good life. One that you may recall as 'good', when you get older.
I miss your writings and those occasional letters.
Wish that you contemplate and write a lot, as much as before.
Hope you've been doing well to this day.
Yours ever,
KS
May you have a good life. One that you may recall as 'good', when you get older.
I miss your writings and those occasional letters.
Wish that you contemplate and write a lot, as much as before.
Hope you've been doing well to this day.
Yours ever,
KS
উত্তরপাড়ার কথা
উত্তরপাড়ার কথা বলি। আমার জন্ম কলকাতায় হলেও, স্কুলবেলার শেষ পর্যন্ত কেটেছে আমার সেখানে। বাড়ি বলতে, পাড়া বলতে, ছোটবেলা বলতে বুঝি- উত্তরপাড়া। হুগলী জেলার এক প্রান্তে থাকা, প্রাচীন এক মফঃসল।
ছোট্ট জায়গা। টাউন বলা যায়। প্রায় সবাই সবাইকে চেনে। শুধু চেনা নয়, ঠিকুজি-কুষ্ঠি জানে। লুকিয়ে প্রেম করা দূরে থাক, একা একা ফুচকা বা আইসক্রিম খাওয়াও অসম্ভব ব্যাপার। যত দূরেই থাকি না কেন, চেনা কেউ একবার দেখতে পেলে হল। ওষুধের দোকানের কাকু, পাশের বাড়ির কাজের মাসি, সদাব্যস্ত মহলানবীশ দাদু- যে দেখতে পাবে চেঁচিয়ে ডাক দিয়ে পিলে চমকে দেবে -কীরে, কবে এলি? আছিস তো এখন? একগাল হেসে বলা-এই তো এলাম, আছি। এটাই আদর। বুকের মধ্যে স্পষ্ট বুঝতে পারা- পৌঁছে গেছি।
অনেকগুলো মাঠ ছিলো। ছোট ছোট। বড় বড়। মাঠের পাশে কল্কেফুলের গাছ,টগরফুলের গাছ, মালতিলতা অনেক ছিল। খেলাধূলায় কোনোদিন-ই তেমন পারদর্শী না হবার ফলে, মাঝে মাঝেই মূল খেলা থেকে বাদ পড়ে যেতাম। দুধভাত। খেললে ভালো, না খেললে আরো ভালো। প্রথমটা অভিমান হত। তারপর সত্যি বলতে ভালোই লাগত কিন্তু। পুরো বিকেলটাই খেলে কাটিয়ে দেওয়া ব্যাপারটা তখন ছেলেমানুষী মনে হত। এই যে এত ফুল পড়ে আছে মাঠে, দলে পিষে চলে যাচ্ছি খেলতে খেলতে, একটিবারও হাতে তুলে দেখবো না কেমন ফুটেছিল? হাতে ধরত না সব পছন্দের ফুল, জামার পকেটে পুরতাম। সূর্য ডুবে যাবার সময়কার আকাশ দেখতাম ঘুরতে ঘুরতে- কত রঙ ধরত সাদা সাদা মেঘগুলোয়! থাকতো না বেশীক্ষন। নিম গাছ, নারকেল গাছ, কাঠগোলাপ গাছের সারি পেরিয়ে, পুকুর আর রেললাইন পার হয়ে চলে যেত দিনের আলো। বিকেল শেষ হয়ে আসতো। তখনো কলোনি এসোসিয়েশন লাইব্রেরীর মেম্বারশিপ ছিলনা। এমনি রিডিং রুমে গিয়ে অমর চিত্র কথা, নন্টে-ফন্টে, চাচা চৌধুরী পড়ে আবার রেখে আসতাম। বানান করে পড়তে পারি তখন।
দলে দলে ছেলেমেয়ে সাইকেল চালিয়ে যেত যার যার কোচিং ক্লাসের দিকে। যে বয়েসের কথা বলছি তখন আমার না ছিল সাইকেল, না পারতাম চড়তে। নিজের সম্পত্তি বলতে একটা রঙ করা টিনের বাক্স ছিল, বাবার টেবিলের নিচে রাখতাম। খালি ভাবতাম কবে সাইকেলে চড়ে পড়তে যাব ওই সব দাদা-দিদিদের মত। সাইকেলটাই ছিল আকর্ষণ। খেলে ফেরার পথে, মিষ্টির দোকান থেকে সিঙ্গাড়া ভাজার গন্ধ আসতো। ওসব খাওয়া বারন ছিল অনেকদিন। দেখতাম ফুটবল খেলে ফেরা ধুলোমাখা ছেলেদের, সবাই হাফ প্যান্ট। বগলে বল- উত্তেজিত ভাবে কথা বলতে বলতে হাঁটত। কেউ কেউ দাঁড়িয়ে যেত মিষ্টি বা ঘুগনীর দোকানের সামনে, জল চাইতো। ভাবতাম, ছেলেগুলো কেমন যেন। এত ধুলো মেখে কীকরে এত আনন্দে থাকে কে জানে।
সেইসব ধুলোমাখা ছেলেদের অনেককেই চিনেছি আরেকটু বড় হয়ে, একসঙ্গে পড়তে গিয়ে। ফাংশান বা পিকনিক করতে গিয়ে। কেউ কেউ আমার কিশোরীবেলার বন্ধু।
উত্তরপাড়া গঙ্গার ধারে। বালির দিকে হাঁটতে থাকলে একসময় চোখে পড়বে দক্ষিনেশ্বরের মন্দির, নদীর ওপারে। এপারের রাস্তাটা জি টি রোড। অনেকগুলো ঘাট আছে। নামকরা ঘাটেরা হল- শিবতলার ঘাট, খেয়াঘাট, দোলতলার ঘাট। দোলতলায় বসে দোলের মেলা। দোলের দিন থেকে বসে, দারুণ জমজমাট মেলা। রকমারি নাগরদোলায় চড়া, খেলনা-পুতুল, ভেঁপু-বাঁশি ছাড়াও ছোটদের আকর্ষণ থাকে জিলিপি, বাদামের গুড়-তক্তি, জিবেগজার প্রতি। পাওয়া যায় রসের গজা, নোনতা কাঠিভাজা, নিমকি, ফুটকড়াই, নানারকম আচারও। বড়রাও দেদার খায় এসব, তারসঙ্গে খায় এগরোল, ফিশফ্রাই, চাউমিন। কেনে হাতপাখা, লোহার চাটু, টিফিন কৌটো, চাকি-বেলনা, খুরপি... আরো কত কী। কিনবে বলে টাকা জমিয়ে রাখে রুমালে বেঁধে, সেই পুজোর পর থেকে। পুতুলনাচ হয় একধারে। কাচের চুড়ির দোকানে প্রায় প্রতি বছর আসে নতুন ধরনের কোনো চুড়ি। একবার এসেছিল রামায়ণ চুড়ি, একবার দিলওয়ালে চুড়ি। এখন নাকি আসছে করিনা কাপুর চুড়ি।
দোলের দিন এই দোলতলার ঘাটের চওড়া সিঁড়িগুলো রঙে মাখামাখি হয়ে থাকে আর সন্ধেবেলায় তাদের উপর একটু একটু করে নেমে আসে মোহময়ী জ্যোতস্নারাশি। সোনালী দিনের পরে একটা রূপোলী দিন শুরু হয়। মোহরের মত চাঁদটা গঙ্গার শিয়রে এসে দারুণ এক রোমান্টিক আবহ তৈরী করে দেয়।
খুশি খুশি একটা গন্ধ ছড়িয়ে যেতে থাকে গঙ্গার দিক থেকে আসা ভিজে বাতাসের সঙ্গে। আবির, জিলিপি আর বাদামের ধরা-ধরা শুকনো গন্ধের সঙ্গে মিশে যায়। তার সঙ্গে কখনো সখনো মেশে কামিনী ফুলের গন্ধ। তখন বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে মনে হয়- এই দুনিয়ার সকল ভালো।
দিনকাল পালটে গেছে অনেক, যেমন যায়। আমাদের বাড়ির পাশের কাঁঠাল গাছটা কাটা পড়েছে, অনেক বছর হয়ে গেল। ওই গাছটায় হাঁকাবুড়ো থাকতো, খুব ভয় পেতাম তাকে।
অনেক মাঠ আর নেই। অনেক বাড়িও। তার বদলে অনেক অনেক নতুন এপার্টমেন্ট তৈরী হয়েছে জায়গা জুড়ে। স্টেশন আর বাজারের দিকটায় সবচেয়ে বেশী। তাদের সবাইকে দেখতে ভালো-ও লাগে না, মানানসই তো নয়-ই। মনে হয় গায়ের জোরে ঢুকে পড়েছে। উত্তরপাড়াকে তার অনেক পুরনো বাসিন্দা এখন ঠাট্টা করে 'ফ্ল্যাটপাড়া' ডাকে।
আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে, পারমার স্কুল ছাড়িয়ে যে রাস্তাটা শান্তিনগর রোড-এ গিয়ে মেশে, সেই মোড়ে একটা বাড়ির গায়ে একটা দোকান ছিল। খুব ছোট, খুব অল্প কটা জিনিস থাকতো। খুব বুড়ো একজন মানুষ চালাতেন দোকানটা। টিউব অথবা বাল্ব কিছুই ছিল না, একটা লন্ঠনের আলোয় কেনা-বেচা চলত রাত্রে। বিড়ি-সিগারেট, দেশলাই, সস্তার চা পাতা থাকত। চানাচুর, ডালমুঠ, ঝাল লজেন্স আর বিস্কুট দেখেছি ম্লানমুখ কতগুলো বয়ামে। পাকানো দড়িতে আগুন জ্বলে থাকতো। খুব ছোটবেলায়, দোকানটা দেখলে আমার কেমন ঘুম-ঘুম পেত। রহস্যময় লাগত বালিকা বয়েসের চোখে। একবার ভেবেছিলাম- বুড়ো মানুষটার কত কষ্ট হয়, ওঁর কি নেই কেউ? হয়ত ছিল, হয়ত কষ্টও হত না তত, তবু কাঁপা-কাঁপা হাতে চা পাতা ওজন করতে দেখে বড্ড মায়া লাগত। আধো অন্ধকারে নিচু চৌকির ওপর চট পেতে বসে থাকা বুড়ো মানুষ। খুব শীতের রাতেও দেখেছি শাল মুড়ি দিয়ে চুপ করে বসে আছেন। বলাই বাহুল্য, খদ্দের বেশী হতনা।
অনেক বছর ভুলে ছিলাম সেই দোকানটার কথা। মনে পড়ল কয়েকদিন আগে, হঠাত অকারণ। সেই বুড়ো মানুষটা তো নেই-ই, সেই দোকান এমনকি বাড়িটাও নেই।
খুব চেনা, খুব প্রিয় একটা বই থেকে পাতা ছিঁড়ে নেওয়ার মত মনে হয়। আর কটা মাত্র চেনা পাতা বাকি আছে। ওর গল্পগুলোও আর তেমন বুঝতে পারিনা।
(আপাতত শেষ)
ছোট্ট জায়গা। টাউন বলা যায়। প্রায় সবাই সবাইকে চেনে। শুধু চেনা নয়, ঠিকুজি-কুষ্ঠি জানে। লুকিয়ে প্রেম করা দূরে থাক, একা একা ফুচকা বা আইসক্রিম খাওয়াও অসম্ভব ব্যাপার। যত দূরেই থাকি না কেন, চেনা কেউ একবার দেখতে পেলে হল। ওষুধের দোকানের কাকু, পাশের বাড়ির কাজের মাসি, সদাব্যস্ত মহলানবীশ দাদু- যে দেখতে পাবে চেঁচিয়ে ডাক দিয়ে পিলে চমকে দেবে -কীরে, কবে এলি? আছিস তো এখন? একগাল হেসে বলা-এই তো এলাম, আছি। এটাই আদর। বুকের মধ্যে স্পষ্ট বুঝতে পারা- পৌঁছে গেছি।
অনেকগুলো মাঠ ছিলো। ছোট ছোট। বড় বড়। মাঠের পাশে কল্কেফুলের গাছ,টগরফুলের গাছ, মালতিলতা অনেক ছিল। খেলাধূলায় কোনোদিন-ই তেমন পারদর্শী না হবার ফলে, মাঝে মাঝেই মূল খেলা থেকে বাদ পড়ে যেতাম। দুধভাত। খেললে ভালো, না খেললে আরো ভালো। প্রথমটা অভিমান হত। তারপর সত্যি বলতে ভালোই লাগত কিন্তু। পুরো বিকেলটাই খেলে কাটিয়ে দেওয়া ব্যাপারটা তখন ছেলেমানুষী মনে হত। এই যে এত ফুল পড়ে আছে মাঠে, দলে পিষে চলে যাচ্ছি খেলতে খেলতে, একটিবারও হাতে তুলে দেখবো না কেমন ফুটেছিল? হাতে ধরত না সব পছন্দের ফুল, জামার পকেটে পুরতাম। সূর্য ডুবে যাবার সময়কার আকাশ দেখতাম ঘুরতে ঘুরতে- কত রঙ ধরত সাদা সাদা মেঘগুলোয়! থাকতো না বেশীক্ষন। নিম গাছ, নারকেল গাছ, কাঠগোলাপ গাছের সারি পেরিয়ে, পুকুর আর রেললাইন পার হয়ে চলে যেত দিনের আলো। বিকেল শেষ হয়ে আসতো। তখনো কলোনি এসোসিয়েশন লাইব্রেরীর মেম্বারশিপ ছিলনা। এমনি রিডিং রুমে গিয়ে অমর চিত্র কথা, নন্টে-ফন্টে, চাচা চৌধুরী পড়ে আবার রেখে আসতাম। বানান করে পড়তে পারি তখন।
দলে দলে ছেলেমেয়ে সাইকেল চালিয়ে যেত যার যার কোচিং ক্লাসের দিকে। যে বয়েসের কথা বলছি তখন আমার না ছিল সাইকেল, না পারতাম চড়তে। নিজের সম্পত্তি বলতে একটা রঙ করা টিনের বাক্স ছিল, বাবার টেবিলের নিচে রাখতাম। খালি ভাবতাম কবে সাইকেলে চড়ে পড়তে যাব ওই সব দাদা-দিদিদের মত। সাইকেলটাই ছিল আকর্ষণ। খেলে ফেরার পথে, মিষ্টির দোকান থেকে সিঙ্গাড়া ভাজার গন্ধ আসতো। ওসব খাওয়া বারন ছিল অনেকদিন। দেখতাম ফুটবল খেলে ফেরা ধুলোমাখা ছেলেদের, সবাই হাফ প্যান্ট। বগলে বল- উত্তেজিত ভাবে কথা বলতে বলতে হাঁটত। কেউ কেউ দাঁড়িয়ে যেত মিষ্টি বা ঘুগনীর দোকানের সামনে, জল চাইতো। ভাবতাম, ছেলেগুলো কেমন যেন। এত ধুলো মেখে কীকরে এত আনন্দে থাকে কে জানে।
সেইসব ধুলোমাখা ছেলেদের অনেককেই চিনেছি আরেকটু বড় হয়ে, একসঙ্গে পড়তে গিয়ে। ফাংশান বা পিকনিক করতে গিয়ে। কেউ কেউ আমার কিশোরীবেলার বন্ধু।
উত্তরপাড়া গঙ্গার ধারে। বালির দিকে হাঁটতে থাকলে একসময় চোখে পড়বে দক্ষিনেশ্বরের মন্দির, নদীর ওপারে। এপারের রাস্তাটা জি টি রোড। অনেকগুলো ঘাট আছে। নামকরা ঘাটেরা হল- শিবতলার ঘাট, খেয়াঘাট, দোলতলার ঘাট। দোলতলায় বসে দোলের মেলা। দোলের দিন থেকে বসে, দারুণ জমজমাট মেলা। রকমারি নাগরদোলায় চড়া, খেলনা-পুতুল, ভেঁপু-বাঁশি ছাড়াও ছোটদের আকর্ষণ থাকে জিলিপি, বাদামের গুড়-তক্তি, জিবেগজার প্রতি। পাওয়া যায় রসের গজা, নোনতা কাঠিভাজা, নিমকি, ফুটকড়াই, নানারকম আচারও। বড়রাও দেদার খায় এসব, তারসঙ্গে খায় এগরোল, ফিশফ্রাই, চাউমিন। কেনে হাতপাখা, লোহার চাটু, টিফিন কৌটো, চাকি-বেলনা, খুরপি... আরো কত কী। কিনবে বলে টাকা জমিয়ে রাখে রুমালে বেঁধে, সেই পুজোর পর থেকে। পুতুলনাচ হয় একধারে। কাচের চুড়ির দোকানে প্রায় প্রতি বছর আসে নতুন ধরনের কোনো চুড়ি। একবার এসেছিল রামায়ণ চুড়ি, একবার দিলওয়ালে চুড়ি। এখন নাকি আসছে করিনা কাপুর চুড়ি।
দোলের দিন এই দোলতলার ঘাটের চওড়া সিঁড়িগুলো রঙে মাখামাখি হয়ে থাকে আর সন্ধেবেলায় তাদের উপর একটু একটু করে নেমে আসে মোহময়ী জ্যোতস্নারাশি। সোনালী দিনের পরে একটা রূপোলী দিন শুরু হয়। মোহরের মত চাঁদটা গঙ্গার শিয়রে এসে দারুণ এক রোমান্টিক আবহ তৈরী করে দেয়।
খুশি খুশি একটা গন্ধ ছড়িয়ে যেতে থাকে গঙ্গার দিক থেকে আসা ভিজে বাতাসের সঙ্গে। আবির, জিলিপি আর বাদামের ধরা-ধরা শুকনো গন্ধের সঙ্গে মিশে যায়। তার সঙ্গে কখনো সখনো মেশে কামিনী ফুলের গন্ধ। তখন বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে মনে হয়- এই দুনিয়ার সকল ভালো।
দিনকাল পালটে গেছে অনেক, যেমন যায়। আমাদের বাড়ির পাশের কাঁঠাল গাছটা কাটা পড়েছে, অনেক বছর হয়ে গেল। ওই গাছটায় হাঁকাবুড়ো থাকতো, খুব ভয় পেতাম তাকে।
অনেক মাঠ আর নেই। অনেক বাড়িও। তার বদলে অনেক অনেক নতুন এপার্টমেন্ট তৈরী হয়েছে জায়গা জুড়ে। স্টেশন আর বাজারের দিকটায় সবচেয়ে বেশী। তাদের সবাইকে দেখতে ভালো-ও লাগে না, মানানসই তো নয়-ই। মনে হয় গায়ের জোরে ঢুকে পড়েছে। উত্তরপাড়াকে তার অনেক পুরনো বাসিন্দা এখন ঠাট্টা করে 'ফ্ল্যাটপাড়া' ডাকে।
আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে, পারমার স্কুল ছাড়িয়ে যে রাস্তাটা শান্তিনগর রোড-এ গিয়ে মেশে, সেই মোড়ে একটা বাড়ির গায়ে একটা দোকান ছিল। খুব ছোট, খুব অল্প কটা জিনিস থাকতো। খুব বুড়ো একজন মানুষ চালাতেন দোকানটা। টিউব অথবা বাল্ব কিছুই ছিল না, একটা লন্ঠনের আলোয় কেনা-বেচা চলত রাত্রে। বিড়ি-সিগারেট, দেশলাই, সস্তার চা পাতা থাকত। চানাচুর, ডালমুঠ, ঝাল লজেন্স আর বিস্কুট দেখেছি ম্লানমুখ কতগুলো বয়ামে। পাকানো দড়িতে আগুন জ্বলে থাকতো। খুব ছোটবেলায়, দোকানটা দেখলে আমার কেমন ঘুম-ঘুম পেত। রহস্যময় লাগত বালিকা বয়েসের চোখে। একবার ভেবেছিলাম- বুড়ো মানুষটার কত কষ্ট হয়, ওঁর কি নেই কেউ? হয়ত ছিল, হয়ত কষ্টও হত না তত, তবু কাঁপা-কাঁপা হাতে চা পাতা ওজন করতে দেখে বড্ড মায়া লাগত। আধো অন্ধকারে নিচু চৌকির ওপর চট পেতে বসে থাকা বুড়ো মানুষ। খুব শীতের রাতেও দেখেছি শাল মুড়ি দিয়ে চুপ করে বসে আছেন। বলাই বাহুল্য, খদ্দের বেশী হতনা।
অনেক বছর ভুলে ছিলাম সেই দোকানটার কথা। মনে পড়ল কয়েকদিন আগে, হঠাত অকারণ। সেই বুড়ো মানুষটা তো নেই-ই, সেই দোকান এমনকি বাড়িটাও নেই।
খুব চেনা, খুব প্রিয় একটা বই থেকে পাতা ছিঁড়ে নেওয়ার মত মনে হয়। আর কটা মাত্র চেনা পাতা বাকি আছে। ওর গল্পগুলোও আর তেমন বুঝতে পারিনা।
(আপাতত শেষ)
Subscribe to:
Posts (Atom)
